Arpita Mukherjee: আজও মেয়ে অর্পিতার বাড়ি ফেরার অপেক্ষায় ‘মা’ মিনতি দেবী, শুনুন তার কথা

এক বছর আগে বেলঘরিয়ার একটি নিম্ন মধ্যবিত্ত বাড়ির সামনে অহরহ শুরু হয়েছিল মিডিয়ার আনাগোনা। বাড়ির কর্ত্রী অসুস্থ, সত্তরোর্ধ্ব বৃদ্ধা। বারবার মিডিয়ার প্রশ্নে বিরক্ত হয়ে উঠেছিলেন তিনি। ইডির হানায় ভয় পেয়েছিলেন। তাঁর জং ধরে যাওয়া পুরানো আলমারিতে কিছুই পাওয়া যায়নি সেদিন। তবু অপবাদের ভাগী হয়েছিলেন মিনতি মুখোপাধ্যায় (Minati Mukherjee)। তাঁর মেয়ে অর্পিতা মুখোপাধ্যায় (Arpita Mukherjee) গত এক বছর ধরে জেলবন্দি। রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় (Partha Chatterjee)-র সাথে নিয়োগ দূর্নীতি কান্ডে গ্রেফতার হয়েছিলেন অর্পিতাও। তাঁর ডায়মন্ড সিটি, বেলঘরিয়ার আবাসন সহ যাবতীয় অ্যাপার্টমেন্টগুলি থেকে ইডি উদ্ধার করেছিল কোটি কোটি টাকার পাহাড়। মিনতি দেবী বলেছিলেন, মেয়ের কর্মকান্ড বিষয়ে তিনি কিছুই জানতেন না। এরপর ঘুরে গিয়েছে বছর।
গ্লুকোমায় আক্রান্ত মিনতি দেবীর কথা অনেকেই ভুলে গিয়েছেন। কিন্তু অর্পিতার মা অপেক্ষা করছেন তাঁর মেয়ের জন্য। তাঁর মতে, একদিন জেল থেকে ছাড়া পাবেন অর্পিতা। ফিরে আসবেন বেলঘরিয়ার পৈতৃক ভিটেতেই। কারণ অর্পিতার বিলাসবহুল অ্যাপার্টমেন্টগুলি সীল করে দিয়েছে ইডি। ফলে বেলঘরিয়ার বাড়িতে ফিরে আসা ছাড়া আর কোনো রাস্তা নেই তাঁর। গ্রেফতার হওয়ার পর দীর্ঘ দশ মাস জামিনের আবেদন না করলেও গত মে মাসে জামিনের আবেদন করেছিলেন অর্পিতা। তাঁকে আদালতে হাজির করা হয়েছিল। ভার্চুয়ালি নয়, সশরীরে। অর্পিতার পক্ষে সওয়াল করেছিলেন দিল্লির বিখ্যাত আইনজীবী বৃন্দা গ্রোভার (Vrinda Grover)। তিনি এজলাসে পার্থকে মাস্টারমাইন্ড বলে দাবি করেছিলেন।
কিন্তু ইডির তরফে পার্থ ও অর্পিতাকে সমান দোষী বলা হয়। তবে মিনতি দেবী বলেন, অর্পিতা যদি কিছু জেনে থাকেন, তবে তা নিশ্চয়ই বলেছেন। অর্পিতা চাকরি কেনা-বেচা করেননি। ফলে তাঁর জামিন না পাওয়ার কোনো কারণ নেই বলে মনে করেন তাঁর মা। মিনতি দেবীর এক চোখে অস্ত্রোপচার হয়েছে। চলছে গ্লুকোমার চিকিৎসা। ওজন কমাতে বলেছেন চিকিৎসক। একসময় অর্পিতা বেলঘরিয়ার বাড়িতে এসে গাড়ি করে মাকে চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যেতেন। বর্তমানে অন্যের সাহায্য নিয়ে হাসপাতালে চিকিৎসকের কাছে দেখাতে যান মিনতি দেবী।
রাজ্য সরকারের অর্থ দফতরে তেত্রিশ বছর চাকরি করেছেন মিনতি দেবী। অর্পিতার বাবাও কেন্দ্রীয় সরকারি চাকরি করতেন। কিন্তু কলেজ জীবন থেকেই মডেলিং শুরু করেন অর্পিতা। বাংলা ও ওড়িয়া ফিল্মে অভিনয়ও করেছেন তিনি। মিনতি দেবী মেয়েকে বিয়ের কথা বললেও অর্পিতার মনে পুরুষ সম্পর্কে অন্য ধারণা ছিল। তিনি একাধিক পুরুষের সাথে সম্পর্কে ছিলেন। এমনকি তাঁদের টাকা ধার দিলেও ফেরত পাননি অর্পিতা। তবে মিনতি দেবী চান, ভবিষ্যতে বিয়ে করে থিতু হোন তাঁর মেয়ে। পার্থর সাথে ঘনিষ্ঠতার ব্যাপারে মিনতি দেবী কিছু জানতেন না। তবে ভৈরব গাঙ্গুলী কলেজের একটি অনুষ্ঠানে এসেছিলেন পার্থ। সেই সময় অর্পিতার বাড়ির সামনে এলেও বাড়ির ভিতরে ঢোকেননি তিনি বলে জানালেন মিনতি দেবী।
বর্তমানে কখনও সখনও মেয়ের সাথে ভিডিও কলে মিনতি দেবীর কথা হয়। কয়েক মিনিটের ভার্চুয়াল সাক্ষাতে মেয়েকে কোনো পরামর্শ দেন না তিনি। মিনতি দেবী মনে করেন, মেয়ে বাচ্চা নয়। ফলে যা করবেন তা বুঝেই করবেন অর্পিতা। একবার মেয়ের রাজসাক্ষী হওয়ার কথা সংবাদমাধ্যমে শুনলেও মিনতি দেবী জানালেন, অর্পিতা তদন্তে সাহায্য করছেন। তবে গত এক বছরে তাঁর প্রতিবেশীরা অর্পিতার প্রসঙ্গ তুলে মিনতি দেবীকে বিব্রত করেননি। পাড়ার পুরানো বাসিন্দা তিনি। ফলে প্রতিবেশীরা তাঁর প্রতি সহানুভূতিশীল।