অফবিটনিউজ

অসহায় ছাত্রছাত্রীদের পড়িয়েছেন মাত্র ২ টাকা বেতনে, পদ্মশ্রী সম্মানে ভূষিত হলেন ‘সদাই ফকির’ মাস্টার

এবার বাংলার ঘরে মুকুট। ২০২১ সালের পদ্মশ্রীর তালিকায় নাম উঠল পূর্ব বর্ধমানের সুজিত চট্টোপাধ্যায়ের। তাকে ফোন করে পদ্মশ্রী পুরস্কারের কথা জানানো হয়। যদিও তিনি প্রথমটায় বিশ্বাস করতে পারেননি। কিন্তু কিছু কিছু সময় আমাদের অজান্তেই এমন সুসংবাদ হাজির হয় যা আমরা সত্যিই বিশ্বাস করে উঠতে পারিনা। বারবার মনে হতে থাকে এটি ঘটা কী সত্যিই সম্ভব? তেমনটাই ঘটেছে পূর্ব বর্ধমানের বাসিন্দা সুজিত চট্টোপাধ্যায়ের জীবনে। কিন্তু তার পদ্মশ্রী পাওয়ার কারণ কী? তিনি একজন ৭৮ বছর বয়সী শিক্ষক। কিন্তু শিক্ষা তিনি দান করলেও তার বিনিময়ে টাকা পয়সা নেন না তিনি।

অসহায় ছাত্রছাত্রীদের পড়িয়েছেন মাত্র ২ টাকা বেতনে, পদ্মশ্রী সম্মানে ভূষিত হলেন 'সদাই ফকির' মাস্টার

সামান্য অর্থের মাধ্যমে তিনি রাশি রাশি শিক্ষা দান করছেন। সুজিত চট্টোপাধ্যায় পূর্ব বর্ধমানের আউশগ্রামের রামনগরে দীর্ঘ দিন ধরে “সদাই ফকির”র পাঠশালা চালান। আর সেই পাঠশালায় পড়তে আসে ৩০০ জন পড়ুয়া। তবে সেই পড়ুয়াদের থেকে তিনি একেবারে সামান্য টাকা নেন। প্রতি পড়ুয়া পিছু বছরে সুজিত চট্টোপাধ্যায় ২ টাকা ‘গুরুদক্ষিণা’ নেন। তার সঙ্গে চারটি ছোট চকলেট। সুজিত বাবুর এই কর্মকান্ডের কথা পৌঁছে গিয়েছে উচ্চস্তরে। সুজিত বাবুর ভাইপো উৎসব চট্টোপাধ্যায়ের ফোন বেজে ওঠে বিকেল ৪টে ৪৫ মিনিটে।

অসহায় ছাত্রছাত্রীদের পড়িয়েছেন মাত্র ২ টাকা বেতনে, পদ্মশ্রী সম্মানে ভূষিত হলেন 'সদাই ফকির' মাস্টার

আর সেই ফোনে মাস্টারমশাই সুজিত চট্টোপাধ্যায় কে চাওয়া হয়। এরপর তাকে ফোন দিলে ফোনের ওপার থেকে সুজিত বাবুকে জিগ্যেস করা হয়, “আপনি কি সুজিত চট্টোপাধ্যায়? এবারের যারা পদ্মশ্রী পুরস্কারে ভূষিত হবেন তাদের তালিকায় আপনি রয়েছেন। অনুষ্ঠানে আগামী মার্চ মাসের শেষ দিকে দিল্লিতে অনুষ্ঠিত হবে”। তবে এই ফোন পাওয়ার পর সুজিত বাবু একটু চমকে যান। তার মেয়ে জানান, এটি ভুয়ে ফোন হতে পারে তাই কাউকে কিছু বলার দরকার নেই। কিন্তু তারপরই সংবাদমাধ্যমের তরফে ফোন গেলে তিনি সংশয় দূর করেন।

অসহায় ছাত্রছাত্রীদের পড়িয়েছেন মাত্র ২ টাকা বেতনে, পদ্মশ্রী সম্মানে ভূষিত হলেন 'সদাই ফকির' মাস্টার

সুজিত বাবু গত ৪০ বছর ধরে শিক্ষকতা করেন। তিনি একটি বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করতেন। এরপর গত ১৮ বছর ধরে তার গ্রামের ছেলেমেয়েদের কাছে শিক্ষা বিলিয়ে আসছেন। তার এই শিক্ষকতা একেবারেই অর্থ উপার্জনের জন্য নয়। তিনি তার গ্রামে শিক্ষা ছড়িয়ে দিতে চান এটিই তার লক্ষ্য। তিনি নবম, দশম, একাদশ, দ্বাদশ ও কলেজের প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় বর্ষের ছাত্র ছাত্রীদের পড়ান। তবে এরমধ্যে বেশিরভাগই ছাত্রী। তিনি লক ডাউনে যাদের কাছে মোবাইল ফোন রয়েছে তাদের মোবাইলে পড়িয়েছেন।

অসহায় ছাত্রছাত্রীদের পড়িয়েছেন মাত্র ২ টাকা বেতনে, পদ্মশ্রী সম্মানে ভূষিত হলেন 'সদাই ফকির' মাস্টার

৭৮ বছর বয়সী সুজিত চট্টোপাধ্যায়ের পরিবারে রয়েছে স্ত্রী, মেয়ে, ছেলে, ভাইপো, নাতিনাতনি। তার স্ত্রী অসুস্থ ও শয্যাশায়ী। জানা গিয়েছে সুজিত চট্টোপাধ্যায় লক ডাউনে কর্মহীন ২৫০ টি পরিবারের হাতে চার দফায় ৭৫ হাজার টাকার সামগ্রী তুলে দিয়েছেন। এছাড়া ৭জন থ্যালাসেমিয়া রোগীকেও তিনি সাহায্য করেছেন। তাই তিনি পদ্মশ্রী পাচ্ছেন এই খবরে খুশি গোটা গ্রামের মানুষ।

Related Articles